Tuesday, May 10, 2016

তনু হত্যায় চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন মা

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এবার সরাসরি দু'জন সেনা সদস্যকে দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছেন তার মা আনোয়ারা বেগম।

তিনি বলেন, 'সার্জেন্ট জাহিদ ও সিপাহী জাহিদের বাসায় আমার মেয়ে টিউশনি করতো। ২০ মার্চ বিকালে টিউশনির কথা বলে তনুকে সালমা আক্তার নামের এক মেয়ের মাধ্যমে ডেকে নেন সিপাহী জাহিদ। এরপর রাতে মেয়ের লাশ সেনানিবাসের জঙ্গলে পাওয়া যায়।'

তনুর মায়ের দাবি, 'একটি অনুষ্ঠানে গান না গাওয়ায় তনুকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পর বাসা থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের অ্যালবাম নিয়ে যাওয়ার পর আমাদের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি হয়েছে। ঘটনার আড়াল করার চেষ্টা করছে ওরা।'

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সিআইডি কার্যালয়ে ঢোকার আগে সাংবাদিকদের তনুর মা আনোয়ারা বেগম এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, 'সেনা ইউনিটের অনুষ্ঠানে গান না করায় তার মেয়েকে হত্যা করা হয়। তার চুল কেটে দেয়া হয়। হত্যার পর তার মেয়ের লাশ বাড়ির কাছে ফেলে রেখে যাওয়া হয়।'

ঘটনার দিনের বর্ণনা দিয়ে আনোয়ারা বেগম বলেন, 'সার্জেন্ট জাহিদ ও সিপাহী জাহিদের বাসায় আমার মেয়ে টিউশনি করতো। ওই সুবাদে তাদের সঙ্গে তনুর পরিচয় ছিল। এরপর থেকে সেনানিবাসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ও গান গায়।'

তিনি বলেন, 'গত ১৭-১৮ মার্চ সেনানিবাসের একটি অনুষ্ঠানে তনুর গান গাওয়ার কথা ছিল। ওই অনুষ্ঠানে তনুকে গান গাওয়ার জন্য তারা অনুরোধ করেন। কিন্তু তনু শ্রীমঙ্গলে অন্য একটি অনুষ্ঠানে যাবে তাই গান গাইতে পারবে না বলে তাদের জানিয়ে দেয়।'

মায়ের ভাষ্য, 'পরে গান না গেয়ে তনু ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের সদস্যদের সঙ্গে শ্রীমঙ্গলে চা বাগান ও লাউয়াছড়া উদ্যানে ভ্রমণে যায়। সেখান থেকে ফিরে আসার পর ২০ মার্চ বিকালে টিউশনির কথা বলে তনুকে সালমা আক্তার নামের এক মেয়ের মাধ্যমে ডেকে নেন সিপাহী জাহিদ। এরপর রাতে মেয়ের লাশ সেনানিবাসের জঙ্গলে পাওয়া যায়।'

এতদিন পর এমন দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, 'মেয়ে হারিয়ে আমরা পাগলপ্রায়। মেয়েটির সঙ্গে আমার বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ক ছিল। বাসার যে কক্ষে যাই, সেখানেই ওর স্মৃতি। তাই সব কথা সব সময় মনে আসে না।'

আনোয়ারা বেগম বলেন, 'এখন বিচারও পাচ্ছি না, সান্ত্বনাও পাচ্ছি না। তাই মেয়ে হত্যার বিচারের জন্য আল্লাহর দিকে তাকিয়ে আছি।'

এ সময় তনুর বাবা ইয়ার হোসেন সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, আমাদের বিভিন্নস্থানে ডেকে এনে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের নামে হয়রানি করা হচ্ছে। মামলা তদন্তে কোনো অগ্রগতি কিংবা ঘাতক ধরা না পড়লেও বারবার আমাদের কাছে তনুর বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য জানতে চাওয়া হচ্ছে।

মামলার অগ্রগতি ও তদন্তকারী সংস্থার কার্যক্রমে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, 'আমার মেয়ের শরীরে এত আঘাত ছিল। চুল কেটে নেয়া হয়েছে। এরপরও মৃত্যুর কারণ খুঁজে পাচ্ছে না।'

ইয়ার হোসেন আরও বলেন, 'হত্যার পর বাদী হয়ে গত ৫০ দিনেও এ মামলার কোনো কিনারা দেখছি না। যেখানে আমাদের সবার সহযোগিতা পাওয়ার কথা, সেখানে আমাদের প্রতি সহযোগিতা নেই, সহমর্মিতাও নেই।'

এদিকে আজ বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত কুমিল্লা সিআইডি কার্যালয়ে তনুর বাবা, মা, ভাই ও সহপাঠীসহ ১০ জনকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির উচ্চ পর্যায়ের তদন্তদল।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিআইডি ঢাকার বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহ্হার আকন্দের নেতৃত্বে পরিদর্শক গোলাম মাওলাসহ উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত সহায়ক দলটি ঢাকা থেকে কুমিল্লা সিআইডি কার্যালয়ে পৌঁছান।

এরপর বিকালে তনুর বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী ইয়ার হোসেন, মা আনোয়ারা বেগম, ছোট ভাই নাজমুল হোসেন, চাচাতো বোন লাইজু জাহান, সহপাঠী কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বিভাগের ছাত্র মাহমুদুল হাসান, শামীম, তনুর সঙ্গে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান পরিবেশনকারী স্থানীয় শিল্পী সোনিয়া সাহা ওরফে শান্তা, শিল্পী সারোয়ার আহমেদ রাসেল, নুরুল ইসলাম খোকনকে সিআইডি কার্যালয়ে ডেকে আনা হয়। বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

এ বিষয়ে সিআইডি কুমিল্লা-নোয়াখালী অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নামজুল করিম খাঁন যুগান্তরকে বলেন, মামলার তদন্তের স্বার্থে মঙ্গলবার ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসের অভ্যন্তরে সোহাগী জাহান তনুর লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় তনুর বাবা ইয়ার হোসেন কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন।

কোতোয়ালি মডেল থানা, জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের হাত ঘুরে গত ১ এপ্রিল এই মামলার তদন্তভার দেয়া হয় সিআইডিকে।

লাশ পাওয়ার পর ২১ মার্চ তনুর লাশের প্রথম ময়নাতদন্ত হয়। পরে আদালতের নির্দেশে ৩০ মার্চ দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত করা হয়। এরপর গত ৪ এপ্রিল প্রথম ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়, যাতে মৃত্যুর কোনো কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পরে লাশ তুলে ফের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে - See more at: http://www.jugantor.com/online/national/2016/05/10/12521/%E0%A6%A4%E0%A6%A8%E0%A7%81-%E0%A6%B9%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%9E%E0%A7%8D%E0%A6%9A%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%95%E0%A6%B0-%E0%A6%A4%E0%A6%A5%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%A8-%E0%A6%AE%E0%A6%BE#sthash.Rheg54bY.dpuf


কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এবার সরাসরি দু'জন সেনা সদস্যকে দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছেন তার মা আনোয়ারা বেগম

তিনি বলেন, 'সার্জেন্ট জাহিদ সিপাহী জাহিদের বাসায় আমার মেয়ে টিউশনি করতো। ২০ মার্চ বিকালে টিউশনির কথা বলে তনুকে সালমা আক্তার নামের এক মেয়ের মাধ্যমে ডেকে নেন সিপাহী জাহিদ। এরপর রাতে মেয়ের লাশ সেনানিবাসের জঙ্গলে পাওয়া যায়।'

তনুর মায়ের দাবি, 'একটি অনুষ্ঠানে গান না গাওয়ায় তনুকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পর বাসা থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের অ্যালবাম নিয়ে যাওয়ার পর আমাদের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি হয়েছে। ঘটনার আড়াল করার চেষ্টা করছে ওরা।'

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সিআইডি কার্যালয়ে ঢোকার আগে সাংবাদিকদের তনুর মা আনোয়ারা বেগম এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, 'সেনা ইউনিটের অনুষ্ঠানে গান না করায় তার মেয়েকে হত্যা করা হয়। তার চুল কেটে দেয়া হয়। হত্যার পর তার মেয়ের লাশ বাড়ির কাছে ফেলে রেখে যাওয়া হয়।'

ঘটনার দিনের বর্ণনা দিয়ে আনোয়ারা বেগম বলেন, 'সার্জেন্ট জাহিদ সিপাহী জাহিদের বাসায় আমার মেয়ে টিউশনি করতো। ওই সুবাদে তাদের সঙ্গে তনুর পরিচয় ছিল। এরপর থেকে সেনানিবাসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গায়।'

তিনি বলেন, 'গত ১৭-১৮ মার্চ সেনানিবাসের একটি অনুষ্ঠানে তনুর গান গাওয়ার কথা ছিল। ওই অনুষ্ঠানে তনুকে গান গাওয়ার জন্য তারা অনুরোধ করেন। কিন্তু তনু শ্রীমঙ্গলে অন্য একটি অনুষ্ঠানে যাবে তাই গান গাইতে পারবে না বলে তাদের জানিয়ে দেয়।'

মায়ের ভাষ্য, 'পরে গান না গেয়ে তনু ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের সদস্যদের সঙ্গে শ্রীমঙ্গলে চা বাগান লাউয়াছড়া উদ্যানে ভ্রমণে যায়। সেখান থেকে ফিরে আসার পর ২০ মার্চ বিকালে টিউশনির কথা বলে তনুকে সালমা আক্তার নামের এক মেয়ের মাধ্যমে ডেকে নেন সিপাহী জাহিদ। এরপর রাতে মেয়ের লাশ সেনানিবাসের জঙ্গলে পাওয়া যায়।'

এতদিন পর এমন দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, 'মেয়ে হারিয়ে আমরা পাগলপ্রায়। মেয়েটির সঙ্গে আমার বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ক ছিল। বাসার যে কক্ষে যাই, সেখানেই ওর স্মৃতি। তাই সব কথা সব সময় মনে আসে না।'

আনোয়ারা বেগম বলেন, 'এখন বিচারও পাচ্ছি না, সান্ত্বনাও পাচ্ছি না। তাই মেয়ে হত্যার বিচারের জন্য আল্লাহর দিকে তাকিয়ে আছি।'

সময় তনুর বাবা ইয়ার হোসেন সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, আমাদের বিভিন্নস্থানে ডেকে এনে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের নামে হয়রানি করা হচ্ছে। মামলা তদন্তে কোনো অগ্রগতি কিংবা ঘাতক ধরা না পড়লেও বারবার আমাদের কাছে তনুর বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য জানতে চাওয়া হচ্ছে।

মামলার অগ্রগতি তদন্তকারী সংস্থার কার্যক্রমে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, 'আমার মেয়ের শরীরে এত আঘাত ছিল। চুল কেটে নেয়া হয়েছে। এরপরও মৃত্যুর কারণ খুঁজে পাচ্ছে না।'

ইয়ার হোসেন আরও বলেন, 'হত্যার পর বাদী হয়ে গত ৫০ দিনেও মামলার কোনো কিনারা দেখছি না। যেখানে আমাদের সবার সহযোগিতা পাওয়ার কথা, সেখানে আমাদের প্রতি সহযোগিতা নেই, সহমর্মিতাও নেই।'

এদিকে আজ বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত কুমিল্লা সিআইডি কার্যালয়ে তনুর বাবা, মা, ভাই সহপাঠীসহ ১০ জনকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির উচ্চ পর্যায়ের তদন্তদল।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিআইডি ঢাকার বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহ্হার আকন্দের নেতৃত্বে পরিদর্শক গোলাম মাওলাসহ উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত সহায়ক দলটি ঢাকা থেকে কুমিল্লা সিআইডি কার্যালয়ে পৌঁছান।

এরপর বিকালে তনুর বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী ইয়ার হোসেন, মা আনোয়ারা বেগম, ছোট ভাই নাজমুল হোসেন, চাচাতো বোন লাইজু জাহান, সহপাঠী কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বিভাগের ছাত্র মাহমুদুল হাসান, শামীম, তনুর সঙ্গে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান পরিবেশনকারী স্থানীয় শিল্পী সোনিয়া সাহা ওরফে শান্তা, শিল্পী সারোয়ার আহমেদ রাসেল, নুরুল ইসলাম খোকনকে সিআইডি কার্যালয়ে ডেকে আনা হয়। বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

বিষয়ে সিআইডি কুমিল্লা-নোয়াখালী অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার . নামজুল করিম খাঁন যুগান্তরকে বলেন, মামলার তদন্তের স্বার্থে মঙ্গলবার ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসের অভ্যন্তরে সোহাগী জাহান তনুর লাশ পাওয়া যায়। ঘটনায় তনুর বাবা ইয়ার হোসেন কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন।

কোতোয়ালি মডেল থানা, জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের হাত ঘুরে গত এপ্রিল এই মামলার তদন্তভার দেয়া হয় সিআইডিকে।

লাশ পাওয়ার পর ২১ মার্চ তনুর লাশের প্রথম ময়নাতদন্ত হয়। পরে আদালতের নির্দেশে ৩০ মার্চ দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত করা হয়। এরপর গত এপ্রিল প্রথম ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়, যাতে মৃত্যুর কোনো কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পরে লাশ তুলে ফের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে

by MM Telecom Pvt Ltd

No comments:

Post a Comment

আপনাকে ধন্যবাদ ।